1) সামনেই আসছে বড়দিন, যাকে আমরা বলি ক্রিস্টমাস। শীতকালের খুশির আমেজ শুরু হয় বড়দিনের হাত ধরে, তারপরেই নতুন বছর আসার পালা। সবমিলিয়ে মজা, আনন্দ, হইচই, রমরমা ব্যাপার। এই ছুটি উপলক্ষ্যে আবির এসেছে তার মামার বাড়ি, ব্যান্ডেল। আবির কলকাতায় থেকে পড়াশোনা করছে, বাবা মা মারা যাওয়ার পর থেকেই মামার বাড়িটাই নিজের বাড়ি হয়ে গিয়েছে। আর মামা মামির কোনো সন্তান নেই বলে আবিরকে মানুষ করছে সন্তান স্নেহে। ২৫শে ডিসেম্বর হতে বেশকিছুদিন বাকি আছে এখনো, এর মধ্যেই আবির কাছেপিঠে টুকটাক ঘোরাঘুরি শুরু করে দিয়েছে ওর স্থানীয় বন্ধুদের সাথে। তাদের মধ্যে আবার সবথেকে প্রিয় বান্ধবী ইলিয়ানা। ও খ্রিস্টান, ওর ব্যান্ডেলেই জন্ম, ছোট থেকে এখানেই বড় হয়ে ওঠা। আবিরের থেকে ২ বছরের ছোট হলেও ওদের বন্ধুত্ব দেখে তা বোঝার উপায় নেই। ওদের মধ্যে সবথেকে বড় মিল হল দুজনেই একই প্রকৃতিরর মানুষ, ওরা গোটা পৃথিবীকে জানতে চায়, একসাথে দেখতে চায় সবটা। - আবির, চল না রে, আজ কোথাও ঘুরে আসি দুজনে। - কোথায় যাবি বল ? তুই যেখানে বলবি আমি চোখ বুজেই সেখানে যেতে রাজি। - তুই না সত্যি একটা পাগল। - জানি তো, আর সেটাও তো একজনের জন্য। - কি ?? কার জন্য ?? কোনো মেয়ে টেয়ে না তো ?? দেখ ওসবের চক্করে ভুলেও পড়িস না। - কেন যদি কারোর জন্য পাগল হই মন্দ কি ??? - কিছুই না, তবুও সবাইকে দেখি তো, প্রেম টেম করে, তারপর ধোকা খেয়ে বিরহী হয়ে ঘুরে বেড়ায়। হা হা হা........ -আচ্ছা তুই চল এক জায়গায়, তোকে আমার ভালোবাসার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো আজ। - কি বলছিস ? জল এতদূর ?? তাও আবার আমাকে ফাঁকি দিয়ে ??? চল চল এবার তো যেতেই হবে, তুই কাকে এতদিন আমার নজর থেকে বাঁচিয়ে রাখলি, তাকে তো দেখতেই হচ্ছে !!!! ইলিয়ানা ওর স্কুটিটা নিয়েই বেরোলো, আর আবির ওর পেছনে লাগা শুরু করলো। - হে ভগবান বাঁচিয়ো আমায়, কার স্কুটিতে উঠলাম ভুল করে। - ওইই একদম বেশি বকবক করবি না, তাহলে এক্ষুনি স্কুটি থেকে নামিয়ে দেবো। - না না মা, রেগে যাচ্ছো কেন ? আমি তো মজা করছিলাম...... -তোর মজা আমি বার করছি দাঁড়া তুই, হতচ্ছাড়া...... -আচ্ছা আচ্ছা শোন, তুই পরে মজা দেখাস, আপাতত একটু side কর স্কুটিটা। এখানেই আসতে বলি ওকে। - আরেব্বাস, "ওকে" !!!! দেখবো সেই হনুমতি কে !!! হুহহহহহহ.... -এই চুপ করতো। - আচ্ছা চুপ। বেশ কিছুক্ষন পর..... - ইলি (ইলিয়ানা) শোন..... বলেই মাঝ রাস্তায় আবির ওর হাত দুটো ধরে, হাঁটু গেড়ে বসে সবার সামনে চেঁচিয়ে বলে উঠলো - I Love You, I want to marry you....... ইলিয়ানা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। - ভালোবাসিস, সেই কথা জানাতে এত দেরি করলি কেন ? আমি তো সেই কবে থেকে তোর অপেক্ষায় ছিলাম। প্রায়ই ভাবি এই বুঝি আবির বলবে ওর মনের কথা, এই বুঝি আবির জানাবে ও আমায় কত্তটা ভালোবাসে। ইলিয়ানার কথা শুনে আবির কিছুক্ষণ হাআআ করে তাকিয়ে থাকার পর বলে, - তার মানে তুইও আমায় ভালোবাসিস ? এতদিন বলিসনি কেন শয়তান ? - আমি কখোন বললাম যে আমি তোকে ভালোবাসি !!! হা হা !! আমি তোকে ভালোবাসি না রে আবির, in fact কখনো পারবোও না, কারন জিগেস করিস না। সেটা আমি নিজেও জানি না। নে নে এবার ওঠ দেখি, রাস্তায় সবাই দেখেছে তোকে। হা হা। - এসবের মানে কি !! তুই কি মজা করছিস আমার সাথে ? - এসবের কোনো মানে নেই, বুদ্ধু একটা। উফফ নে এবার চল। বাড়ি যাই। - আচ্ছা ! চল এখন, কিন্তু আমিও বলে দিলাম আমাকে ভালো একদিন তোকে বাসতেই হবে ইলি। - হুম সে না হয় দেখা যাবে। ক্রিস্টমাস এল, যাকে বলে বড়দিন। ইলিয়ানার গ্র্যান্ডমা (ঠাকুমা) কেক,পেস্ট্রি কত কি বানিয়েছে। সেসব খেতে হবে, চার্চ-এ যেতে হবে, ঘুরতে হবে কত প্ল্যান আবিরের। আর সবটাই ওর ইলি-কে ঘিরে। চার্চ থেকে বেড়িয়ে আবির ইলিয়ানা-কে নিয়ে কাছে পিঠেই ঘুরতে গেল। সেখান থেকে ফেরার পথে ঘটে এক দুর্ঘটনা। ব্রেক ফেল করা এক মারুতিকে সাইড দিতে গিয়ে ওদের স্কুটিটা ল্যাম্পপোষ্টে গিয়ে ধাক্কা খায়।ইলিয়ানা ছিটকে যায় বেশকিছুটা দূরে আর আবির স্কুটির সাথেই লেপটে আছে। চলতি পথের লোকজন ধরাধরি করে ওদের কাছেই এক নার্সিংহোম-এ নিয়ে যায়। ইলিয়ানার মাথায় চোট লেগেছে। স্ক্যান না করলে বোঝা যাবে না মাথার চোট কতটা গভীর। আর আবির !!! আবিরের অবস্থা ঠিক কেমন, সেটা বলা মুশকিল। খবর পেয়ে আবিরের মামা মামি আর ইলিয়ানার গ্র্যান্ডমা এসেছে। কিছুক্ষণ বাদে ডাক্তার এসে জানায়, আবিরকে বাঁচানো গেলেও আবিরের চোখ দুটো...... অপারেশন করতে হবে, তাহলে যদি ওর দৃষ্টি আবার ফেরানো যায় !!! আবিরের মামা বলে, - অপারেশন করুন, যত টাকা লাগে দেবো আমরা। ডাক্তার জানায়, - কথাটা টাকার নয়, কথাটা আই ডোনার-এর। আমাদের কাছে এমন কেউ চেনা জানা নেই, যে আই ডোনেট করবে। আপনাদের হাতে চারদিন সময় আছে, যদি কোনো দয়ালু মানুষ থেকে থাকে আমাদের জানাবেন। আর আমরাও দেখছি যদি তেমন কেউ থাকে। ডাক্তারের কথা সবাইকে এক গভীর চিন্তায় ফেলে দিল। ভাবতে ভাবতে দুদিন কেটে গেল। এরকম কাওকেই পাওয়া গেল না। অন্যদিকে ইলিয়ানার দিকেও তাকানো যাচ্ছে না, স্ক্যানে ধরা পড়েছে ওর চোটও মারাত্মক। সময় যত এগিয়ে আসছে, সকলের চিন্তা তত বাড়ছে। ইলিয়ানা আগের চেয়ে একটু ভালো। কিন্তু এর মধ্যেও ও ভাবছে ওর জন্যই হয়তো আবিরের এই অবস্থা। কিন্তু এই অবস্থার জন্য যে কেউই দায়ী নয়। আবিরের মামার ফোনে হঠাৎ ডাক্তারের ফোন এল, - হ্যালো, আবিরের মামা বলছেন ? Good news আছে। আবিরের চোখের জন্য একজন ডোনার পাওয়া গেছে। কালকেই আমরা অপারেশন করবো, আপনারা তাড়াতাড়ি চলে আসবেন। - হ্যাঁ হ্যাঁ, নিশ্চয়। ভগবানকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবিরের মামা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। পরেরদিন অপারেশন ভালোভাবেই হল, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সেই ডোনার কে ? কে আবিরের এত বড় উপকার করলো ? আবির ওর দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার আনন্দে একসময় এসব প্রশ্ন চাপা পড়ে গেল। দু'দিন পর আবিরকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার ইলির খোঁজও করেছে ও। কিন্তু যেহেতু ইলিও অসুস্থ তাই আর আসতে পারেনি। নতুন বছর পড়তে মাঝে আর মাত্র একটা দিন। আবির সুস্থ বোধ করছে বেশ। তাই এরই মধ্যে প্ল্যান করে ফেলেছে, নতুন বছরের প্রথম দিনটা দুজনে একসাথেই কাটাবে। কিন্তু আবির তো এসে থেকে একবারও ইলির সাথে দেখাও করেনি, কথাও বলেনি। একবার খোঁজ নিতে হবে। আবির ইলির ফোনে ফোন করল, কিন্তু ফোনটা ওর গ্র্যান্ডমা ধরলো। - হ্যালো আবির, কেমন আছো my child ? - গ্র্যান্ডমা এখন ভালো আছি, বলছি শোনো না ইলি কোথায় ? ওকে একটু ফোনটা দাও না, কতদিন ওর সাথে দেখা হয়নি, কথা হয়নি। - ওকে তো এখন ফোন দেওয়া যাবে না আবির, ও আমাকে বলেছে ও তোমার সাথে একেবারে নতুন বছরের শুরুতে দেখা করবে। ততক্ষন তো তোমায় wait করতেই হবে ! - তার মানে এখনো একটা দিন ? আচ্ছা এগুলো কি পাগলামো বলোতো ?? আচ্ছা বেশ আমি 1st জানুয়ারি ওর সাথে দেখা করবো। নতুন বছর শুরু হওয়ার সাথে সাথেই আবির অধৈর্য হয়ে ওঠে, ইলির সাথে কখন সে দেখা করবে সেই কথা ভাবতে ভাবতে। রাত ১২ টা বাজার সাথে সাথে সাথেই আবির ইলিয়ানাকে massage পাঠায় কিন্তু ওপার থেকে কোনো reply আসেনি। সকাল হলে ইলিয়ানার গ্র্যান্ডমা আবিরকে ফোন করে জানায় যে সে আবিরের বাড়ি এসে আবিরকে নিয়ে যাবে একজায়গায়। কথা মতো সেরকমই হল, আবির ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ। ইলির সাথে দেখা করবে, তার জন্য এতকিছুর কি প্রয়োজন ? - গ্র্যান্ডমা আমি ইলির সাথে দেখা করতে চাই, ওর সাথে একটু কথা বলতে চাই। ৬ দিন ওকে না দেখে, না কথা বলে আর থাকতে পারছি না। Please try to understand. - এসো আবির, আমার সাথে এসো। এই বলে আবিরকে একটা কবরখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। - আমাকে এখানে আনলে কেন ? - এই card টা তোমার জন্য ইলি পাঠিয়েছে। Card টায় যা লেখা ছিল, তা দেখে আবির পুরো shocked, এসব কি !!! " Dear my Love, এই চিঠিটা যখন পাবি তখন হয়তো আমি আর থাকবো না। তুই জানতে চেয়েছিলিস আমি তোকে ভালোবাসি কিনা ? বিশ্বাস কর তোকে খুব ভালোবাসি রে, নিজের থেকেও বেশি। কিন্তু তোকে কখনো বলতে চাইনি। তোকে আমি সবসময় happy দেখতে চেয়েছি। তুই ভালো থাক সেটাই চেয়েছি। তাই যখন জানতে পারলাম আমার আমার ব্রেইন টিউমার, তখনই তোর প্রতি আমার feelings গুলোকে একটু একটু করে কমিয়ে নিতে চেয়েছি, কিন্তু পারিনি রে, কোনোদিন হয়তো পারবোও না। সেদিন আমি তোকে বলতে পারিনি, তোকে ভালো না বাসার কারণ কিন্তু এই চিঠিতে বলে দিলাম। কথা দিয়েছিলাম তোকে happy রাখবো, তাই আমার ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে সেই কথা রাখার জন্য তোর চোখ আমি ফিরিয়ে দিলাম, যা একদিন আমার জন্যই প্রায় হারিয়ে ফেলছিলিস। তোকে আমি চিরকাল ভালোবাসবো, এভাবেই। কথা দিলাম, তোর সাথেই থাকবো। ভালো থাকিস, আর একদম আমায় miss করবি না তাহলে আমি খুব কষ্ট পাবো। Love you আবির। গোটা দুনিয়া আমরা একসাথেই দেখবো, কথা দিয়েছিলাম। - From your ইলি " আবির ওর সামনের সমাধির দিকে তাকালো, দেখলো তাতে লেখা " Abir's Ili " আকাশের দিকে তাকিয়ে আবির বললো, - যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস ইলি, সত্যি তোর থেকে বেশি কখনো কেউ আমায় ভালোবাসতে পারবে না, কক্ষনো না। হয়তো আমার ভালোবাসার মানুষগুলো এভাবেই আমায় বারবার ফাঁকি দিয়ে চলে যেতে চায়।
We have dedicated and hardworking people always ready to help.